রচনা - সিগারেট এবং এর যৌক্তিক প্রয়োজনীয়তা ।
ভূমিকা - সিগারেট একটি বস্তু। ইংরেজীতে যাকে বলে থিং (Thing) । আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান (Element) । একে পণ্য (Goods) হিসেবেও বিবেচনা করা যায়, যা ধুমপানের মত মহৎ কম্মে ব্যবহৃত হয়। বর্তমান বিশ্ব সংসারে এর মত কাছের এবং আপন সঙ্গী আর নেই । তাই তো মহাজ্ঞানী নেমেসিস বলেছিলেন ,"সিগারেট হচ্ছে সেই মায়াবতী বউ
যে কখনো বাপের বাড়ি যায় না"
উৎপাদন প্রণালি - তামাক এর পাতা সুন্দরভাবে সংগ্রহ করে যত্ন সহকারে কেটে কাগজের ফিল্টারের ভেতর প্রবেশ করিয়ে বিভিন্ন উপাদান মিশ্রণের মাধ্যমে এবং অনেক তপস্যার সাধনে একএকটি সিগারেট উৎপন্ন হয়। সিগারেটের বিশেষত্ব হল, এতে ৫৭ টি মারাত্মক রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ ।
ইতিহাস - সিগারেটের ইতিহাসসুপ্রাচীন। যুগ যুগ ধরে মানুষ শৈল্পিক উপায়ে ধুমপানের নিমিত্তে সিগারেট পান করে আসছে। সভ্যতার ইতিহাস যত পুরনো, মানুষের সাথে সিগারেটের সখ্যতা ততটাই পুরনো ।মানবসভ্যতার নিদর্শন হিসেবে ধরা হয় পাথর ঠুকে ঠুকে আগুন ধরানোর সময়কে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সেই আগুন জ্বালানো হয়েছিল ৩১ মে তারিখে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন বছর পূর্বে।
অন্য এক গবেষণায় বলা হয়, পৃথিবীর হনলুলু এলাকার এক গ্রামের সর্দার টাইকিউপ এর আদেশে তাঁর বিশিষ্ট গুণমুগ্ধা লিলিউপিক প্রথমসিগারেট বানান।
প্রভাব - সিগারেটের প্রভাবসমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ধোঁয়া যেমন চারপাশ গ্রাস করে নেয়, সিগারেটও সমাজ গ্রাস করে নিয়েছে নিজ যোগ্যতায়। পৃথিবীর প্রায় সব মনীষী এবং মহামানবেরা সিগারেটের প্রেমমুগ্ধ ছিলেন।
মানবজাতির অন্যতম বড় প্রতিভা স্যার মার্ক টোয়েন যথার্থই বলেছেন,"স্বর্গে যদি ধূমপানের
ব্যবস্থা না থাকে তবে আমি সেখানেও
যাবো না।"
নারী এবং সিগারেট - সিগারেটের প্রেমে মত্ত হয়ে অনেকে নারীসঙ্গ ত্যাগ করতে কুন্ঠাবোধ করেন না। অনেকসময় দেখা যায় নারীর অযাচিত ন্যাকামী বৈশিষ্ট্যের ফলে সে ধুমপান পছন্দ করে না। অতঃপর ব্যক্তিগত এই অপছন্দ সে তার সঙ্গীর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঙ্গী আশ্বাস দেয় সিগারেট ভালবাসার ইতি টানার। যদিও গোপণ অভিসার খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আবার অনেক সাহসী প্রেমিক বিদ্রোহ করে সিগারেটের সম্মান ধুলায় লুটোতে দেন না।
তেমনই এক সাহসী মহাপুরুষ জো মার্ক্স উচ্চারণ করেন সেই কিংবদন্তী শব্দাবলি,"আমাকে যদি সিগারেট ও নারীর
মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে বল
আমি সব সময় সিগারেটকেই
বেছে নিব।"
সিগারেটীয় অনুভূতি - সিগারেট খাওয়া ভাল একটি কাজ। শীতের সময় সিগারেট খেলে উষ্ণতা পাওয়া যায়। কিংবা বর্ষার সন্ধ্যায় সঙ্গিহীন হয়ে কোলবালিশের কাছে আশ্রয় নেয়ার ভাল একটিবিকল্প এই সিগারেট। এটি প্রথম প্রথম খেলে আপনি হয়তো অনেক কাঁশবেন। আবার মুখে অনেক লালাও জমা হতে পারে। গলা শুকিয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। তাই হাতের কাছে সবসময় ঠান্ডা পানি রাখবেন। টানা তিনটি বেনসন খেলে জিহ্বার নীচে জ্বলতে পারে। তাই খানিকক্ষণ বিরতি নিয়ে খাওয়া বাঞ্চনীয়। আরেকটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন - নতুন নতুন যারা বাইক চালানো শেখে তারা বাইককে রকেটের গতিতে ছোটোয়, তেমনিপ্রথম সিগারেট পানের সময় আপনি হয়তো সাড়ে সাতাশ সেকেন্ডে আস্ত সিগারেট শেষ করে ফেলবেন। এতে নিজেকে একটা কিছু মনে করারকোন কারণ নেই।
সিগারেটের ছোঁয়া - সিগারেটএকটি তুলতুলে বস্তু। যা আপনি বারংবার ছুঁতে চাইবেন। সিগারেটের যেদিকটায় ঠোঁট ছোয়ান হয় সেদিকটা সামান্য স্পঞ্জি।তাই সেটি টেপাটেপি করতে শখহতেই পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন নিজেকে যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা কর্তব্য।
এছাড়া অনেক অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেন সিগারেটে ওষ্ঠ্য ছোয়ান চুমু খাওয়ার মত ব্যপার। বিশেষ করে সিগারেটের শেষ কয়েকটি টান মাথা পাগল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এজন্য অনেক প্রেমিক বলে থাকেন, সিগারেট অভ্যাস নয়, একটি স্বতন্ত্র দর্শন।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সিগারেটের ভূমিকা -আমরা প্রকৃতিতে বসবাস করি। এই প্রকৃতির অনেক বড় রক্ষক আমাদের সিগারেট। সিগারেট তৈরির মাধ্যমে অনেক জায়গা জুড়ে তামাকের চাষ করে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন বৃদ্ধিতে ভুমিকারাখা যায়। এছাড়া সিগারেট খেলে মানুষের মাথা পরিষ্কার থাকে। মাথা প্রকৃতির অংশ। সুতরাং সিগারেট প্রকৃতি পরিষ্কাররাখে।
মশা নিধনে সিগারেটের ব্যবহার - আজ বিশ্ব মশা দ্বারা ব্যপকভাবে আক্রান্ত। মশা আমাদের চামড়ায় আলতো কামড় বসিয়ে আমাদের শরীরের লাল লাল তাজা রক্ত পান করে নেয়। তাই মশাকে ইনসেক্ট ভ্যাম্পায়ার বলা হয়। এই মশাবিরোধী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র হল ধোঁয়া। সিগারেট ধোঁয়া সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের মশা নিধনে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে।
বিভিন্ন সাহিত্যে সিগারেট-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক কবিতায় সিগারেট বন্দনা করে বলেন, 'আজই এই বাদর দিনে, শ্রাবণ সন্ধ্যায় বৃষ্টি ঝরঝর!
তোমাকেই পড়ে মনে ওগো সিগারেট, আহা সিগারেট! '
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল রণহুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, 'বেইনসাফির দুনিয়ায় জানায় ফরিয়াদ, দাম কমাইয়া মুক্তিদাও সিগারেটেরে।
তারুণ্য জাগিয়া গেলে, পার পাবি না শোষিত শাসকদল! '
অন্যদিকে প্রেমিক জীবনানন্দ বলেন, হাজার বছরধরে টানিয়াছি আমি,
এই ঠোট দ্বারা তোমারই ওই অগ্রভাগ।
তোমার পদ্ম মোলায়েম শরীরে হাত বুলিয়েছি
হে সিগারেট কন্যা। '
স্বঘোষিত উত্তরাধুনিক কবি(কপি) আখতারুজ্জামান আজাদ বলেন, সিগারেট খাব, খাবে?
উপসংহার - সিগারেট একটি অত্যন্ত উপকারী বস্তু। আমাদের অর্থনীতিতে এর প্রভাব অতি ব্যপক। ক্লাসের সবচেয়ে গুডি বয় টিও জীবনের একটা অংশে এর স্বাদ নেয়। পারিবারিক ঐতিহ্য হুক্কা এবং পাইপ ছেড়ে অনেকেই সিগারেটের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেন। বর্তমানে অনেকেই ফ্যাশন হিসেবে সিগারেট গ্রহণ করলেও সিগারেটের প্রভাব এবং কার্যক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং আমাদের সিগারেট টানা উচিত। এবং এরজন্য সিগারেটের মূল্য কমানো একটি স্বতঃস্ফূর্ত দাবি। কম দামে সিগারেট পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। আশা করি শাসকগোষ্ঠীর শুভবোধ উদয় হবে। অতঃপর তারা গণদাবি মেনে সিগারেটের দাম কমাবেন।
কবির ভাষায় বলতে হয়, "আজি হতে সিগারেটের দাম কমাও,
হাজার জনম মনে রাখিব তব।"
পুনশ্চঃ ১, কবিদের নিকট হতে ক্ষমা প্রার্থনা পুর্বক।
পুনশ্চঃ ২, উক্তিসমুহ বিভিন্ন জায়গা হতে নেয়া। বিশেষকরে কামরুল হাসান নামক একজনের পোস্ট হতে।
সাবাস ভাইজান দারুন লিখেছেন। আর তাছাড়া প্রেমিকা বা বউকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতেও সিগারেটের জুড়ি নেই।কথা শুনছে না প্রেমিকা/বউ? সোজা সিগারেটের পরিমান মারাত্বক ভাবে বাড়িয়ে দিন। বেনসন পরিহার করে গোল্ড লীফ ধরেন, সুড়সুড় করে কথা শুনবে আপনার যাত্রা থামানর জন্য :-p
ReplyDeletedaruchini dip. ধন্যবাদ এরকম একটি আইডিয়া দেওয়ার জন্য
ReplyDelete