স্লাইড শো ভিডিওতে কি মনিটাইজেশন দিবে ??? আপনার প্রশ্ন আমাদের উত্তর | youtube help bd
স্লাইড শো মনিটাইজেশন নিয়ে জানতে পড়তে পারেন।
বর্তমান সময়ের ইউটিউবারদের সবচাইতে চিন্তার বিষয়
বর্তমান সময়ে স্লাইড শো টাইপের ভিডিওতে মনিটাইজেশন থাকবে কি থাকবেনা অথবা নতুন করে স্লাইড শো ভিডিওতে মনিটাইজেশন পাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে। এই বিতর্ক তৈরী হওয়ার কারণ হচ্ছে অনেকগুলো চ্যানেলেরই মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে গেছে এবং কিছু ইউটিউবার সস্তা ভিউয়ের আশায় এ নিয়ে ভিডিও বানিয়ে পুরো বিষয়টাকে আরো গোলমেলে বানিয়ে দিয়েছে। স্লাইডশোয়ের মনিটাইজেশন নিয়ে আলাপ করার আগেই কিছু প্রাসঙ্গিক আলাপ করে নেয়া দরকার। স্লাইড শো আসলে কি? স্লাইড শো শব্দটি ইউটিউবের কোন টার্মই নয়, এটি আমাদের নিজেদের তৈরী করা একটি ভুয়া আইটেম। তারপরও সবাই এই নামে চেনে বিধায় এই আলোচনায় স্লাইডশো নামেই আলাপ করছি। স্লাইডশো বলতে একটার পর একটা ইমেজ দিয়ে ভিডিও তৈরী করাকেই বুঝায়। ইউটিউব এখনো কোথাও বলেনি যে কোন বিশেষ প্রকারের ভিডিওতে মনিটাইজেশন দিবেনা। তাই অফিশিয়াল তথ্য অনুযায়ী এ কথা বলা যাবেনা যে, স্লাইড শো ভিডিওতে মনিটাইজেশন দিবেনা। কিন্তু অনেক স্লাইডশো চ্যানেলের মনিটাইজেশন অফ হয়ে যাচ্ছে, এ কথাও সত্য। আবার অনেক চ্যানেল মনিটাইজেশন আবেদন করে রিজেক্ট হয়েছে। তাহলে প্যাঁচটা কোন জায়গায়। ইউটিউব এখনো কোথাও এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি এবং করবে বলেও মনে হয়না। যে সব চ্যানেলগুলোর মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলো থেকে অনেকগুলো চ্যানেল আমি ঘুরে দেখেছি। আমার যা মনে হয় স্লাইডশো কোন বিষয় ছিলোনা, বিষয় ছিলো ভিডিও কোয়ালিটি, কপিরাইট, এবং ডুপ্লিকেটেড আইটেমের কারণে মনিটাইজেশন বন্ধ হয়েছে।
আমাদের দেশের অনেক ইউটিউবাররা ইমেজ দিয়ে এতোটাই নিম্নমানের ভিডিও বানায় যে এসব বন্ধ হতে বাধ্য। অনেক স্লাইড চ্যানেল দেখেছি যে তারা মোবাইল দিয়ে স্লাইড ভিডিও বানাতে গিয়ে এবং মোবাইল অপারেটরের ডাটা ব্যবহার করে ইউটিউবিং করতে গিয়ে ফাইলের সাইজ কমাতে চায়। ফাইলের সাইজ কমাতে গিয়ে বিটরেট, ফ্রেম রেট কমিয়ে ফেলে। অথচ ইউটিউবের জন্য কিছু নির্ধারিত বিটরেট, ফ্রেমরেট আছে তা অনেকেরেই জানা নেই। ফলে ভিডিও যাই হোক না কেন তার টেকনিক্যাল কোয়ালিটি কমে যায়। আবার একই ভাবে হাই রেজুলেশনের পিকচার ব্যবহার না করে লো রেজ জেপিজি ড্যামেজড ইমেজ ব্যবহার করে। উভয় কারণেই টেকনিক্যাল কোয়ালিটি কমে যায়। অনেক ইউটিউবারের যথেষ্ট সুবিধা থাকা সত্বেও জানার ঘাটতির কারণে এই বিষয়গুলোতে মার খেয়ে যায়।
এতো গেলো টেকনিক্যাল কোয়ালিটির কথা। কনটেন্টের চোখের দেখা ভিউ কোয়ালিটির দিক নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় কার্টূনের কথা। কার্টূনও আসলে স্লাইড শো। কার্টুনের জন্য প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ১৫ টি ফ্রেম বা ষ্টিল পিকচার একটার পর একটা সরে যায়, যার কারণে আমাদের কাছে চলমান ভিডিও বলে মনে হয় (মজার বিষয় হচ্ছে সব ভিডিওই আসলে স্লাইড শো)। কিন্তু তারা মনিটাইজেশন ঠিকই পাচ্ছে। Meet the Arnold চ্যানেলটি দেখে আসতে পারেন। কারণ দৃষ্টি নন্দন এর একটি বিষয় আছে যা আগে সফটওয়্যার চেকের সময় ধরা পড়তো না, এখন ম্যানুয়ালি রিভিউ হলে আপনার ভিডিও কিভাবে কি বানিয়েছেন তা বিষয় নয় কিন্তু
দেখতে ভালো না হলে মনিটাইজেশন পাবেন না এটাই স্বাভাবিক। যা দেখতেই ভালো লাগছেনা তা বিজ্ঞাপণ উপযোগীও নিশ্চই নয়। মাত্র ২০-২৫ টা ইমেজ দিয়ে কয়েক মিনিট পার করে দিলে সেটিকে ভালো ভিডিও বলার কোন যুক্তি নেই। যাদের স্লাইড চ্যানেল মনিটাইজেশন বন্ধ হচ্ছে তারা ডুপ্লিকেটেড বলে একটি ম্যাসেজ পাচ্ছেন। এখানে আমার ধারণা একই ইমেজের বারবার অনেক ক্রিয়েটর অনেক ভিডিওতে ব্যবহার করার কারণে সেই ইমেজ ব্যবহার করে নতুন ভিডিও বানালে সেটি ডুপ্লিকেট আপলোড হিসেবেই ধরা হচ্ছে। প্রশ্ন আসতে পারে ইউটিউব কিভাবে ইমেজ কে চিনবে? অবশ্যই পারে, ইউটিউব তথা গুগল ইমেজ প্রসেসিংয়ে কতোটা এগিয়েছে তা অকল্পনীয়। আমার গুগল ফটোজে প্রায় লাখখানেকের মতো আমার তোলা এলোমেলো অনেক ছবি আছে। ওখানে গিয়ে সার্চে river লিখে সার্চ দেয়ার সাথে সাথে আমার তোলা সকল নদীর ছবিগুলো চলে এসেছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে তাদের এলগরিদম কতোটা উন্নত মানের। আর ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তিতো গত দশকের কথা। মুস্তাফিজের একই ছবি ১০০ জন ব্যবহার করে ভিডিও বানালেও সেটা ইউটিউব কাউন্ট করতেই পারে।
মনিটাইজেশন বন্ধ হওয়া চ্যানেলগুলো ঘুরে আরো একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছি যে উপরের কারণগুলো ছাড়াও যদি কপিরাইট ক্লেইমড মিউজিক বেশী থাকে তাহলে মনিটাইজেশন বাতিল হয়েছে। চ্যানেলের আউটলুক খারাপ হওয়ার কারণেও বাকী সব ঠিক থাকার পরও মনিটাইজেশন পায়নি এমনও দেখা গেছে। একটি পর্যবেক্ষনে পেয়েছি যে, যারা মনিটাইজেশন পেয়েছে বা যাদের বাতিল হয়নি তাদের সবচেয়ে বেশী ভিউ হওয়া ভিডিওটি ভালো কোয়ালিটির ছিলো এবং ভিউ এর সোর্স ছিলো সাজেষ্টেড ভিউ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ সবগুলো বিষয়েরও ব্যতিক্রমও পাওয়া গেছে। কিন্তু তা সংখ্যায় খুবই সামান্য। লাখ লাখ চ্যানেলের ভিড়ে কয়েকটা এক্সেপশন হওয়া অবাক করা কোন বিষয় নয়।
আরেকটি কথা না বললেই নয়। অনেকেই মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বড় চ্যানেল দিয়ে নতুন একটি চ্যানেলকে এন্ড স্ক্রীন, কার্ড, কমিউনিটি ট্যাব, লিংক এসব দিয়ে প্রোমোট করে দাড় করাতে চাচ্ছেন। তাকে করে নতুন চ্যানেলের ট্রাফিক সোর্স হচ্ছে আননোন অথবা ডিরেক্ট লিংক। অর্থাৎ আপনি শুধু মনিটাইজেশনের জন্য একটি চ্যানেলকে ব্যবহার করছেন। ইউটিউব অফিশিয়ালি বলে দিয়েছে মনিটাইজেশনের উদ্দেশ্যে হলে এটি স্প্যামিং। সুতরাং এই বিষয়টিও লক্ষ্য রাখবেন যারা নতুন কাজ করছেন।
অনেক কথা বলে ফেলেছি। আরো অনেক কিছু বলার ছিলো কিন্তু দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে বলে শেষ টানছি এখানেই। মোদ্দাকথা হচ্ছে স্লাইড শো বলতে দুনিয়াতে কোন আইটেম নাই। সব ভিডিওই স্লাইড শো। বিষয় হচ্ছে কোয়ালিটি। আপনি যদি গ্রাফিক্স বা মিউজিক ব্যবহার করে ভালো কোয়ালিটির ভিডিও বা স্লাইডশো যাই বানান না কেন মনিটাইজেশন না পাওয়ার কোন কারণ নেই। অনেকের ব্যবহার করা আইটেম বা ইমেজ যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে নিজের মতো করে নিজের মেধা খাটিয়ে অরিজিনাল থেকে যতোটা সম্ভব মডিফাই করে নিন। ভালো মানের গ্রাফিক্স ব্যবহার করুন। কপিরাইট ক্লেইমকে এড়িয়ে চলুন। কমিউনিটি গাইড লাইন মেনে চলুন। তবে একটা কথা পরিষ্কার, শুধু মাত্র একটা মোবাইল দিয়ে বাড়িতে বসে একটার পর একটা ইমেজ জোড়া দিয়ে ভিডিও বানিয়ে টাকা ইনকাম করার দিন শেষ। মনিটাইজেশন হবে, কিন্তু মেধা ও শ্রম লাগবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
Md. kamrul islam
No comments
ধন্যবাদ মতামতের জন্য ।
আমাদের সাথেই থাকুন