ইউটিউবের ভিডিও ফেসবুকে দেওয়া যাবে কি না ? এবং ইউটিউবের ভিডিও ফেসবুকে মনিটাইজেশন পাবো কিনা ( দ্বিতয় পর্ব )


আগের পোষ্টে বলেছিলাম যে ইউটিউবের ভিডিও ফেসবুকে দিলে কোন কপিরাইট ইস্যু নেই। তা সত্বেও আমি সরাসরি আপলোড করতে নিষেধ করেছিলাম। এই পর্বে কারণগুলো বলছি। এই পোষ্টে যে কথাগুলো বলবো সেগুলো কোন অফিশিয়াল বক্তব্য নয় বরং আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণের ফলাফল আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

ইউটিউব এবং ফেসবুক দুটি আলাদা ধরণের প্লাটফরম। ইউটিউব স্থির আর ফেসবুক অস্থির। ইউটিউবে মানুষ ফুলস্ক্রীণে মুভি দেখতে বসে আর ফেসবুকে মানুষ টুংটাং নোটিফিকেশনের মাঝখানে ছোট ছোট অনেক বিষয়ে অতিদ্রুত মুভ করে। দুটি সার্ভিসের প্যাটার্ণ যে দুইরকম তাতে কোন সন্দেহ নেই। সার্ভিস দুটির ব্যবহার পদ্ধতিও প্রথম থেকেই আলাদা থাকলেও বর্তমানে একে অন্যের সাফল্য দেখে, একে অপরের ফিচারের মতো করে নতুন সার্ভিস ইন্টিগ্রেড করতে চাচ্ছে। উদাহরণ স্বরুপ, ফেসবুক মনিটাজেশন দিয়ে ইউটিউবের বাজারে ভাগ বসাতে চাচ্ছে আবার ইউটিউব কমিউনিটি ট্যাব দিয়ে ফেসবুকের মতো কমিউনিটি তৈরী করতে চাচ্ছে। তাদের এই চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে এখনো বিস্তর ফাঁরাক রয়েই গেছে। এখন পর্যন্ত ইউটিউব আর ফেসবুক দুটোতেই ভিডিও দেখা গেলেও এই দুটি সার্ভিসের ব্যবহারকারী ব্যক্তিরা আলাদা ধরণের এবং আলাদা মেজাজ মর্জির হয় অথবা সার্ভিস ভেদে একই ব্যক্তির আবহ ভিন্ন হয়ে যায়। আমি একই ব্যক্তি যখন ইউটিউবে থাকি তখন স্থির, আবার ফেসবুকে যখন যাই তখন অতিদ্রুত। অন্যদিকে এদের ভিউ হওয়ার পদ্ধতিও ভিন্ন, যেমন ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় মানুষ ফুল স্ক্রীণে মোবাইলকে পাশাপাশি রেখে দেখতে পছন্দ করে কিন্তু ফেসবুকে তা নয়। বরং ফেসবুকে মোবাইল হাতে যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দেখতে পছন্দ করে। এই দুই ধরণের পছন্দের কারণে নিশ্চিত ভাবেই ভিডিওগুলো সাইজও ভিন্ন মাত্রার হতে হবে। এই বিষগুলোই একটু গভীরভাবে আলোচনা করছি।
প্রথমে বলেছিলাম, কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ইউটিউবে মানুষ লম্বা সময় দেয়, আর ফেসবুকে খুব কম সময়ে শেষ করে পরবর্তী বিষয়ে চলে যায়। তাই আপনার বানানো ভিডিওর প্যাটার্ণও এখানে এসে পরিবর্তন করতে হবে। যেসব ভিডিও ইউটিউবের জন্য ১০ মিনিটের ছিলো সেগুলো কেটে-ছেঁটে ৩ মিনিটের মধ্যে নিয়ে আসা উচিত। মানুষ যাতে দ্রুতই ইন্টারেষ্টিং অংশ দেখে শেষ করে ফেলতে পারে। প্রথম কয়েক সেকেন্ড থেকেই ইন্টারেস্টিং বিষয় শুরু করতে না পারলে মানুষ অন্য দিকে চলে যাবে। ইউটিউবের ভিডিওতে যে ইন্ট্রোর ব্যবহার ছিলো অথবা সাবস্ক্রাইবার চাওয়ার যে ভিডিও/টেক্সট ছিলো সেগুলো ফেসবুকে দেয়া যাবেনা। কারণ ফেসবুক অস্থির চিত্তের। এখানে ইন্ট্রো দেখার বা বোঝার সময় কম। ফেসবুক ভিডিও যেহেতু মানুষ ছোট স্ক্রীণে দেখবে তাই এর টেক্সটগুলো বা তথ্যগুলো ইউটিউবের চেয়ে তুলনামুলক বড় রাখতে হবে। এবং কনট্রাষ্ট কালার ব্যবহার করতে হবে। ইউটিউবের ভিডিও বানানোর অনেক কিছুই এখানে পরিহার করতে হবে। পুরো বিষয়টাই থাকবে অনেক ফাষ্ট এবং শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু। আপনাদের একটি প্রকৃত উদাহরণ দেয়ার জন্য একটি পেজের ঠিকানা দিলাম। https://www.facebook.com/firstmediasoyummy/
কিছু ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন যে আমি আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছি। এই পেজের ভিডিওগুলো দেখার সময় আপনি অজান্তেই ভিডিওটি পুরো শেষ করতে চাইবেন। এর দ্রুততার কারণে কোন অংশে বোরিং লাগবেনা। ফেসবুক এবং ইউটিউবের ভিডিও মেকিং আলাদা। আমি হয়তো তার খুব সামান্যই বলতে পেরেছি। কারণ আমি ভিডিও প্রোডাকশনের সাথে যুক্ত নই। আরো অনেককিছু হয়তো দিনে দিনে বেরিয়ে আসবে।

এবারে আসি থাম্বনেইলের বিষয়ে। ইউটিউবের জন্য বানানো থাম্বনেইল কি ফেসবুকে ব্যবহার করা উচিত হবে? আমার উত্তর আবারো ‘না’। কারণ হচ্ছে ইউটিউবের ভিডিওর মাঝখানে কোন প্লে বাটন আইকন থাকেনা, তাই কোন ফেস বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যদি স্ক্রীণের মাঝ বরাবর থাকে তাহলে কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু ফেসবুকে একটি সেমি ট্রান্সপারেন্ট প্লে বাটন থাকার কারণে থাম্বনেইল বানানোর সময় ইমেজের সেন্ট্রাল অংশটি পরিহার করতে হবে। কোন ফেস বা টেক্সট যাতে ইমেজের মাঝ বরাবর না হয়। আগের মতো বলবো যে টেক্সট কমিয়ে বড় করে দিতে হবে।

বলেছিলাম যে মানুষের অভ্যাস হচ্ছে ইউটিউব ভিডিও মোবাইল পাশাপাশি রেখে ফুলস্ক্রীণে দেখে আর ফেসবুক ভিডিও মোবাইল আড়াআড়িভাবে অর্থাৎ যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দেখে। ইউটিউবের ভিডিও মানুষ টিভিতে, ট্যাবে দেখে কিন্তু ফেসবুক বেশীর ভাগই শুধু মোবাইলে। কিন্তু আপনার ইউটিউবের জন্য বানানো ভিডিও মোটেই মানুষের এই ফেসবুকীয় অভ্যাসের সাথে ম্যাচ করবেনা, তা নিশ্চিত। অর্থাৎ ফেসবুকের জন্য ভিডিও বানাতে গেলে সেই ভিডিগুলোর ওয়াইডথ এর চেয়ে হাইট বেশী হওয়া আবশ্যক। যেটা ইউটিউবে ঠিক উল্টো রকমের। আপনি যে ভিডিওগুলো এরই মধ্যে ইউটিউবের জন্য বানিয়ে ফেলেছেন সেগুলোর জন্য খুব বেশী কিছু করার নেই। বড়জোড় এডিট সফটওয়্যারে নিয়ে ফ্রেমের অনস্ক্রীণ পজিশনকে পরিবর্তন করে কিছুটা ফেসবুকের সাথে ম্যাচ করাতে পারেন। কিন্তু তা ভালোভাবে হবেনা এবং অনেক পরিশ্রমের কাজও। ভবিষ্যতে যখন আপনি ভিডিও বানাতে যাবেন তখন বিষয়টা মাথায় রাখবেন, ফ্রেম এমন ভাবে সেট করার চেষ্টা করবেন যেন ভিডিওর পারপেশন চেঞ্জ বা সাইড কর্প করা হলেও সাবজেক্ট মার না খায়। অর্থাৎ একই ভিডিও শুটে আপনি ইউটিউব এবং ফেসবুক উপযোগী করে বানানোর চেষ্টা করলে সব দিক থেকেই উপযোগী। একই ভাবে টেক্সট এর সাইজ ও পজিশনের জন্যও দুটি ভার্সণ রাখবেন। একটি ইউটিউবের বর্তমান প্যাটার্ণে অন্যটিতে একটু বড় সাইজের ও কনট্রাষ্ট কালারের যেটি ফেসবুকের জন্য।

গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আরো অনেক অনেক বিষয় পেয়েছি যেগুলোর সব এই মুহুর্তে মনে আসছেনা। মাথায় আসলে অবশ্যই জানাবো। আবারো বলছি যে বিষয়গুলো সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত মতামত ও পর্যবেক্ষণ। কোন অফিশিয়াল সোর্স থেকে নেয়া নয়। তাই বিশেষজ্ঞদের সাথে আমার মতো নবীশের মতভেদ হতেই পারে। এবং আমার পর্যবেক্ষণ সবাইকে গ্রহণ করতেই হবে এমনটাও নয়।


হ্যাপি ইউটিউবিং ও ফেসবুকিং
কামরুল ইসলাম রুবেল<!-

1 comment:

ধন্যবাদ মতামতের জন্য ।
আমাদের সাথেই থাকুন

Theme images by urbancow. Powered by Blogger.